বাজিতপুরে কিশোর আজিজুলের নিরাপদ সেচযন্ত্র চলে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে

মহিউদ্দিন লিটন, বাজিতপুর সংবাদদাতা ঃ কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার কৈলাগ ইউনিয়নের কুকরারাই সরকার বাড়ির গ্রামের কৃষক রতন মিয়ার ছেলে ধানি জমিতে বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পের পরিচালনা করছেন। সে এই বছর হাফেজ আঃ রাজ্জাক মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস. এস. সি পরীক্ষা দিয়েছেন। তার অভাবনীয় সফলতার চিত্রটি দেখার জন্য বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আহম্মেদ গতকাল মঙ্গলবার সকালে সেচ প্রকল্পে গিয়ে পর্যবেক্ষন করেন। কিশোর আজিজুল ইসলাম গত কয়েকদিন আগে তার সফলতার আবিষ্কারের জন্য উপজেলা হতে শ্রেষ্ঠ পুরুষ্কার পান। গত কাল মঙ্গলবার কুকরারাই দক্ষিনের বন্দে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এই অভিনব উদ্ভাবন কিশোর আজিজুল ইসলামের। কৃষক তাহের মিয়া সহ অগণিত গ্রাম বাসি জানান, তার আবিষ্কার রিমোট কন্ট্রোলটি ঘরে বসে সেচ প্রকল্প অনায়াশে চালানো যায়। এ বার সেচ মৌসুমের শুরু থেকে আজিজুলের প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামের একটি সেচ প্রকল্পের পানি দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে প্রায় ৫০একর বোরো জমি । বাজিতপুর পি ডি বির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাহ উদ্দিন খান গত কাল মঙ্গলবার আজিজুলের উদ্ভাবন দেখতে ঘটনা স্থলে যান। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান বিশেষ মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে আজিজুল এ অসাদ্য কাজটি করেছে। এতে তিনি বিস্মিত। এর আগে এ ধরণের উদ্ভাবন কখনো দেখেননি। তার বিশ্বাস, আজিজুলের প্রযুক্তি ঘটানো গেলেই অফিসে বসে পৌর এলাকার ডিভাইস নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। সম্ভব বিদ্যুৎ চুরি রোধসহ অনেক কিছুই। তিনি আজিজুলকে তার প্রযুক্তির প্রশারে সব ধরণের সহায়তার আশ্যাস দেন। আজিজুল জানান-২০১৭সালের শুরুর দিকে একদিন তাদের বাড়ির পাশের ট্রান্সফার্মারের একটি ফিউস পুড়েযায়। পুড়েযায় একটি সেচ যন্ত্র। এতে একটি সেচ প্রকল্পের সব জমিতেই সেচ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের লাইনম্যান তাহের কাছে শুনে আজিজুল সমাদান নিয়ে ভাবতে থাকে। ছোটবেলা থেকেই আজিজুল বিদ্যুতের টুকিটাকি কাজ জানতো। বৈদ্যুতিক পাখা ও সে টিক করতো। তাহেরের তথ্য পেয়ে তার মাথায় এই নিয়ে ভাবনা আসে সাধারণত একটি ট্রান্সফমারের ৩টি ফিউজ থাকে। কিন্তু সে যন্ত্রের সঙ্গে ২টি ফিউজ নিয়ন্ত্রন করার উপযোগি সাটার লাগানো থাকে। আজিজুল ভাবে, কি ভাবে ট্রান্সমারের ৩টি ফিউজের ১টি পুড়ে যেতেই সেচযন্ত্র আপনা আপনি বন্ধকরে ফেলা যায়। এক পর্যায়ে এসে এই প্রযুক্তিও পেয়ে ও যায়। প্রয়োগ করে সে দেখলো, তার আবিস্কিত যন্ত্রে ৩টি ফিউজেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এছাড়া ট্রান্সফমার বিকল হতেনা হতেই সেচযন্ত্রটি বন্ধ হয়েছে। এর সঙ্গেই সে জুড়ে দিল ৩টি সাইরেন। এতে বাড়তি সুবিদা হচ্ছে, যখনই ফিউজ পুড়ে যায়, সাইরেনটিও বেজে উঠে। তখন আজিজুল ভাবতে থাকে সেচযন্ত্রের কাছাকাছি না গিয়েই দূর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বা রিমোট দিয়ে কি ভাবে সেটি নিয়ন্ত্রন করা যায়। পড়ে আজিজুল খেলনা গাড়ির রিমোট দিয়ে সেচ যন্ত্রটি নিয়ন্ত্রন করেন। তানা করে পূনরাই বিদুৎ এলে আপনা আপনি কিভাবে সেচযন্ত্র চলবে? একই সঙ্গে চিন্তা আসে যে, বিদ্যুৎ আসার সময় কয়েক সেকেন্ড পর পর ট্রিপ করে। এতে বার বার চালু ও বন্ধ হয়ে যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন চালু হওয়ার ৩- সেকেন্ড পরই সেচ যন্ত্রটি চালু করতে সে সেচ যন্ত্রে জোড়ে দেয় ৬টি ক্যাপাসিটর ও ২টি রিলে। এতে বিদ্যুৎ চালু হয়ে কয়েক সেকেন্ড বাড়ি দিয়ে ক্ষান্ত হওয়ার পরই সেচযন্ত্রটি চালু হচ্ছে। আজিজুল ইসলাম জানায় , সেচযন্ত্রে বাড়তি সুবিধা পেতে তার উদ্ভাবিত সেচযন্ত্রের জন্য অতিরিক্ত প্রায় আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে একই সঙ্গে কয়েকটি যন্ত্র চালানো হলে এবং এক সঙ্গে যন্ত্রাংশ কিনলে সে ক্ষেত্রে খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। আজিজুল সপ্ন দেখে, তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি একদিন সারা দেশে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ নির্ভর সেচ প্রকল্পগুলোই প্রয়োগ কারা হবে। আজিজুলের কৃষক বাবা গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, তার ছেলের উদ্ভাবনী সেচপ্রকল্প একদিন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। কৈলাগ ইউনিয়নের গোলাম কিবরিয়া স্বাধীন জানান, আজিজুলের এই উদ্ভাবনি শক্তির সফলতা তিনি কামনা করেন। বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আহম্মেদ জানান, একিশোরের রিমোটকন্ট্রোল দিয়ে সেচপ্রকল্প চালানো তিনি পর্যবেক্ষন করেন। একিই সঙ্গে তিনি তার সফলতা ও আর্থিক সহযোগিতা দিবেন বলে উল্লেখ করেন।

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ