বর্ষাকালে সুস্থ ও ফিট থাকার ১৩ উপায়
ঋতুর পালাবদলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পড়তে শুরু করেছে সর্বত্র। আর এতে করে গ্রীষ্মের তাপ ও উষ্ণতা থেকে মুক্তি মিলেছে অনেকটা। অনেকেই বৃষ্টির নৈসর্গিক সৌন্দর্য পছন্দ করেন। কেউ বা বৃষ্টিতে হেঁটে বেড়ানোর সময়টুকু উপভোগ করেন অথবা মাঠে সময় কাটাতে আগ্রহী হন। অনেকেই আবার এই সময়ে দীর্ঘ ভ্রমণে বের হয়ে পড়েন। কিন্তু এত কিছুর পরও স্বাস্থ্যগত বেশ কিছু সমস্যার উপদ্রব নিয়ে হাজির হয় বর্ষাকাল।
এই সময়ে খাদ্যাভাস ও পানির কারণে নানা রোগ, যেমন—কলেরা, টাইফয়েড, গ্যাস্ট্রোনেট্রিস, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। জ্বরও হয় অনেকের। তবে এতে আপনি বৃষ্টি উপভোগ করতে পারবেন না, এমনটি ভাববেন না। এই বর্ষা মৌসুমে বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে আপনি নীরোগ থাকতে পারেন, পাশাপাশি বৃষ্টিও উপভোগ করতে পারেন।
স্বাস্থ্য ও জীবনধারাবিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাই এক প্রতিবেদনে বর্ষাকালে সুস্থ ও ফিট থাকার বিস্তারিত জানিয়েছে। একঝলকে পড়ে নিন—
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি
এই মৌসুমে জীবাণু খুব দ্রুত ছড়ায়। তাই নিজের পর্যাপ্ত যত্ন নিতে আপনাকে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। খাওয়ার আগে কিংবা বাহির থেকে এসে খবার তৈরি বা পরিবেশনের আগে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, জীবাণু থেকে মুক্তি পেতে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বেশ কার্যকর উপায়।
চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখুন
আপনার চারপাশে জমে থাকা অপরিচ্ছন্ন পানি মশার আবাসস্থল হয়ে উঠতে পারে। আর এটি ম্যালেরিয়ার বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করে। তাই বাড়ি ও এর চারপাশে যাতে কোথাও পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। কোথাও খোলা পাত্রে পানি যাতে না থাকে, তা নিশ্চিত করুন।
ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল খান
বর্ষা মৌসুমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি পেতে বিভিন্ন মৌসুমি ফল, সবুজ মরিচ, স্ট্রবেরি, টমেটো, ব্রুকলি ও অন্যান্য সবুজ সবজি গ্রহণ করুন। এটি আপনাকে দুর্বল হয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করবে।
রাস্তার খাবার পরিহার করুন
রাস্তার খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। রাস্তায় কাটা ফল বা নানা রকমের খাবার পাওয়া যায়। এসব খাবেন না। এসব খাবার খোলা বাতাসে থাকে, আর তাই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। রাস্তার খাবারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। আর তাই রাস্তার খাবার খেলে খাদ্যবাহিত রোহ, যেমন—ফুড পয়জেনিং, ডায়রিয়া, কলেরা ও টাইফয়েড জ্বর হতে পারে।
গরম পানি পান করুন
বর্ষা মৌসুমে সব সময় গরম পানি পান করুন। এটি পানিতে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে ফেলে। সেই সঙ্গে বাইরের পানি পান থেকে বিরত থাকুন। গরম পানি পানের ফলে আপনি পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
তরকারি ঠিকমতো ধুয়ে নিন
ফলমূল ও তরকারি ভালোভাবে ধুয়ে নিন। বিশেষত পাতাসমৃদ্ধ তরকারি পানিতে যত্নসহকারে ধুয়ে নিতে হবে। কেননা এসবে অনেক জীবাণু, ময়লা থেকে যায়। তাই রান্নার আগে এগুলো ধুয়ে ও ফুটিয়ে নিতে হবে।
পরিষ্কার, শুকনো কাপড় ও জুতা পরিধান করুন
কখনোই ভেজা কাপড় ও জুতা পরিধান করবেন না। কেননা ভেজা কাপড় ও জুতা জীবাণুদের প্রিয় স্থান। বর্ষা মৌসুমে যেহেতু সূর্যের তাপ কম থাকে, তাই এসব পরিধানের আগে অবশ্যই ভালোমতো শুকনো করে নিতে হবে।
প্রতিদিন ব্যায়াম করুন
সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান থাকতে প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। বৃষ্টির কারণে আপনার পক্ষে যদি বাইরে যাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ঘরে থেকেই স্কোয়াটস, পুশ-আপসহ বিভিন্ন শারীরিক কসরতের অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারেন। ব্যায়াম কেবল আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বাড়াবে না, এটি রক্ত চলাচল বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ও ওজনের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
গোসলের পানিতে জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন
আপনি যদি বৃষ্টির পানিতে ভেজেন, তাহলে এরপর গোসলের পানিতে জীবাণুনাশক মিশিয়ে গোসল করুন। এটি আপনাকে জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেবে।
বৃষ্টিতে ভেজার পর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে প্রবেশ করবেন না
বৃষ্টিতে ভেজার পর প্রথমে শরীরকে ভালোভাবে শুকনো করে নিন। এর আগে কখনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে প্রবেশ করবেন না। নয়তো আপনার ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে, আক্রান্ত হতে পারেন জ্বরেও।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
অপর্যাপ্ত ঘুম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এতে করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারেন। তাই রাতে পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। দারুণ একটি ঘুম শেষে সকালে উঠে আপনি চনমনে ও সক্রিয় অনুভব করবেন। তাই প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
অপরিষ্কার হাতে মুখ স্পর্শ করবেন না
আপনার হাত দিনে সহস্রাধিক জীবাণু বহন করে। আর তাই নোংরা হাতে মুখ স্পর্শ করা একেবারেই উচিত নয়। নয়তো জীবাণু চোখ, নাক ও মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই মুখে হাত দেওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করুন
বর্ষা মৌসুমে মশার উৎপাত অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়। আর মশা থেকে রেহাই পেতে শরীরের যে অংশগুলো উন্মুক্ত থাকে, ওই সব অংশে মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করুন।