পাগলা মসজিদের দানবাক্সে  ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা

নূর মোহাম্মদ

এবার কিশোগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া গেছে নগদ  ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ।

দিনভর গননা শেষে  নিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা ইয়াস,নি ও এনডিসি সৌরভ হাসান। গগণার সময় প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এবার চার মাস ২৬দিন পর দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা। এর আগে সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন সর্বোচ্চ দুই কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ পাওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ।  আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। চমৎকার এর ইমারত আর নির্মাণশৈলী মন কাড়ে যে কারও। দৃষ্টিনন্দন এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র মুসলমানদের কাছেই নয়, অন্যান্য ধর্মালম্বীদের কাছেও পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত।

সব ধর্মের মানুষের কাছে  পবিত্র হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। মানুষের বিশ্বাস  যে কোন নিয়ত করে এ  মসজিদে দান করলে মনের ইচ্ছে পূরণ হয়। তবে সব কিছু মারিয়ে এ মসজিদের দান বাক্সে দানের পরিমান বাড়ছে বিষ্ময়কর ভাবে। মসজিদের বড় বড় আটটি লোহার সিন্দুকে নগদ টাকা, স্বর্ণসহ মূল্যবান জিনিস জমা পড়ে।

দেশের মানুষের কাছে অবাক বিষ্ময়ের বিষয় হচ্ছে, ধর্মীয় এ প্রতিষ্ঠানটির দান বাক্সে দানের টাকার পরিমান নিয়ে। মসজিদের বড় বড় লোহার সিন্দুকগুলো খোলা হয় তিন থেকে চার মাস পর পর। আর তখনি কাড়ি কাড়ি টাকা, বিদেশী মুদ্রা আর স্বর্ণালংকার। দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ এ মসজিদের মানত করতে আসেন। দান করেন,  নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র।

শনিবার (১৯ জুন) সকাল পৌনে ৯ টার দিকে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ৮টি দানবাক্স খোলা হয়। ১২টি বস্তায় টাকা ভর্তি করে মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স মাদরাসার  শতাধিক শিক্ষার্থী, ৫০ জন কর্মচারি, আনসার বাহিনী ও রুপালি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ দিনভর টাকা গুনে বিকেলে পুলিশ প্রহরায় পাঠানো হয় ব্যাংকে। দানের টাকায় মসজিদ কমপ্লেক্স ও মাদরাসার খরচ চালানোর পর  অতিরিক্ত টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এর আয় থেকেজেলার বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় অসুদান দেয়া হয়। এছাড়াও অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় মসজিদের তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। মসজিদের পুরষের পাশাপাশি নারীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। পদাধিকার বলে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক।

২০০২ সালে মসজিদ ক্যাম্পাসে একটি হাফেজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৩ একর ৮৮ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সটি ১৯৭৯ সালের ১০ মে থেকে পরিচালনা করছে ওয়াক্কফ প্রশাসন।

জনশ্রুতি আছে, আড়াইশ বছর আগেঈশাখাঁর শাসনামলে খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মাঝখানে পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক ব্যক্তি মাদুর পেতে ভেসে এসে মসজিদের কাছে আশ্রয় নেন। পরে ওই পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধীর পাশে মসজিদটি গড়ে উঠে। পাগলের নামানুসারে এটির নাম হয় পাগলা মসজিদ।

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ