কেশবপুরে খেঁজুরের গাছ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে কাচা ইট বিলুপ্ত হচ্ছে গাছ

তন্ময় মিত্র বাপী, (যশোর)  : যশোরের যশ, খেজুরের রস- এই প্রবাদ ও পরিচিত কথাটি ভূলতে বসেছে এ জনপদের মানুষ। এই কথাটির মুল উৎসস্থল ছিল যশোরের কেশবপুর এলাকা। কেশবপুরের খেজুর গুড় ছিল দেশ সেরা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভোজন বিলাসিদের রসনা মেটাতে এই গুড় যেত দেশের বাইরে। আর শীতের শুরুতে রস-গুড়-পাটালির মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা থাকত গোটা এলাকা। তৈরি হতো হরেক রকমের পিঠা পায়েস। সবই এখন কাগজের পাতায় সীমাবদ্ধ হতে চলেছে। একদিকে ৮০’ দশকের পর থেকে এঅঞ্চলে অকাল বন্যায় হাজার হাজার খেজুর গাছ মরে গেছে। অতীতের মতো আর গাছতো নেই, তারপর বর্তমানে চলছে খেজুর গাছের উপর নিত্যনতুন নির্যাতন। খেঁজুরের গাছ বর্তমানে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করছে যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাল সম্প্রদায় তাদের কাচা ইট পোড়ানোর কাজে। তাদের ইট পোড়ানোর প্রধান জ্বালানিই হচ্ছে খেজুর গাছের কাঠ। এছাড়াও বহু ইটভাটাতেও কয়লার পাশাপাশি খেজুর গাছ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতোসব অত্যাচারের পর যা কিছু গাছ প্রাণ নিয়ে বেচে আছে তা থেকে যে রস হচ্ছে তার দাম সাধারনের নাগালের বাইরে। এক ভাড় খেজুর রস গেল বছরও ১শ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমান বছরে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা দরে। খেঁজুর গাছ এখন বিলুপ্তর পথে। সরেজমিনে কেশবপুর উপজেলার াালতাপোল, বুড়িহাটি, সাতবাড়িয়া, গোপালপুর, গৌরিঘোনা, হাসানপুর, মঙ্গলকোট, মাগুরখালি, ত্রিমোহিনী, কোমরপোল, সাগরদাঁড়ী, গড়ভাঙ্গা, মনিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা, রাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে খেজুর গাছ পোড়ানোর দৃশ্য। বুড়িহাটি গ্রামের বিশ্ব^ পাল, গোবিন্দ পাল, হাজারি পাল, কার্ত্তিক পাল, নারায়ন পাল, অনিল পাল, নিমাই পাল, গোপাল পালসহ অনেকেই খেঁজুর গাছ দিয়ে বাড়ির ভিতরে মিনি ভাটা তৈরি করে কাচা ইট পোড়াচ্ছে। তাদের খেজুর গাছ পোড়ানোর বিষয়টি একপ্রকার ওপেনসিক্রেট। আর এসব কারনেই খেঁজুরের রস ও গুড় এখন সাধারন মানুষের নাগালের বাইরে। এককেজি খেজুর পাটালি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা দরে। সাধারন মানুষ গুড়ের দোকানে গিয়ে দাম শুনেই আত্মতৃপ্তিতে দিন কাটাচ্ছে। এলাকা ঘুরে বিভিন্ন আতিয়ার রহমান, মতিয়ার গাজি, ইসলাম, খোরশেদ, আলমগীর, জসিমসহ অনেক গাছিই সাংবাদিকদের বলেন, মিনি ভাটার কারণে খেঁজুর গাছ বিলুপ্তির পথে দেখা দিয়েছে। দিনে পর দিন গাছ খেকোরা খেঁজুর গাছ কর্তন করে স্বল্প দামে তাদের কাছে বিক্রি করছে। বুড়িহাড়ি গ্রামের মজিবর রহমান জানান, মিনি ভাটার নামে কাচা ইট খেঁজুর গাছ দিয়ে পোড়ানোর কারণে রসের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে গুড় পাটালির দামও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকাবাসির মিনি ভাটার নামে এসব অবৈধ ইট পোড়ানোর কারখানায় খেঁজুর গাছ দিয়ে কাচা ইট পোড়ানো বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তপে কামনা করেছেন। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতেই বাদবাকি গাছ গুলো হারিয়ে যাবে। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বঞ্চিত হবে রস-গুড় থেকে। ##

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ