বনরক্ষীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সুন্দরবনে মেডিকেল ক্যাম্প
খুলনা জেলার শেষ লোকালয় থেকে সুন্দরবনের নীলকমল ফরেস্ট স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। অন্য কোনো যানবাহন না থাকায় ট্রলারে করে লোকালয়ে আসতে সময় লাগে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ওই স্টেশনের বনরক্ষী জাহিদ হোসেন হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। ট্রলারে করে খুলনায় আনার পথে তিনি মারা যান।
জাহিদ হোসেনের (৪৬) মতো সুন্দরবনের বনরক্ষীদের এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতে বা স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বিশেষ মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সুতারখালী স্টেশনে দুই দিনের ওই বিশেষ ক্যাম্পের উদ্বোধন করা হয়।
এই মেডিকেল ক্যাম্পের আওতায় বনরক্ষীদের ইসিজি, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও র্যাপিড করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে খুলনার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন মেডিকেল অফিসার ও চারজন টেকনিশিয়ান চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। ওই ক্যাম্প দুই দিন খুলনা রেঞ্জ এলাকায় বনের মধ্যে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বনফাঁড়ি ও স্টেশনে গিয়ে ১২৫ জনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা পরামর্শ দেবে।
বন কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ, মুঠোফোন সংযোগবিচ্ছিন্ন সুন্দরবন একটি কারাগারের মতো। সেখানে একদিকে যেমন খাওয়ার পানির সংকট রয়েছে, তেমনি সংকট রয়েছে খাদ্যসামগ্রীর। কোনো কিছু কিনতে গেলে কয়েক ঘণ্টা ট্রলার চালিয়ে লোকালয়ে গিয়ে তা কিনতে হয়। পরিবার ও সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন বনরক্ষীরা বনের মধ্যে একপ্রকার অসহায় জীবনযাপন করেন। এর বিনিময়ে সামান্য কোনো সুবিধাও তাঁরা পান না। এসব কারণে সুন্দরবনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক বনরক্ষী নানান শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু নানা জটিলতায় তাঁরা সহজে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে এ ধরনের উদ্যোগ একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি একদিকে যেমন বনরক্ষীদের উৎসাহিত করবে, অন্যদিকে তাঁদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা করবে। তবে এমন ব্যবস্থা চলমান রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেন তাঁরা।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুতারখালী স্টেশনে পরীক্ষার সময়ে দুজনের ডায়াবেটিসের মাত্রা পাওয়া গেছে ২৪ ও ১৮। অন্যদিকে ইসিজিতে ধরা পড়েছে একজনের হৃদ্যন্ত্রের অবস্থা খুবই খারাপ। চিকিৎসকেরা ওই তিনজনকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা ও অন্যান্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। ওই ক্যাম্পের মাধ্যমে পরীক্ষা না করালে বড় কোনো অঘটনও ঘটে যেতে পারত বলে মনে করেন তিনি।
দুই দিনের ওই মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন, খুলনা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবু সালেহ, দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার আশফাক আহমেদ, বন মামলা আদালতের আইনজীবী মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ।
Source: Prothomalo