গণটিকার লক্ষ্যে খুলনার নগর–গ্রামে প্রস্তুতি

খুলনার নগর ও গ্রামে টিকাদান কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গণটিকা কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকার বিষয়ে অনেকের দুশ্চিন্তা ছিল। অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকাও বুধবার খুলনায় পৌঁছেছে। এতে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৪৮ হাজার মানুষের অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে।

টিকা কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, খুলনা নগর এলাকার ৩১টি ওয়ার্ডের ৩১টি কেন্দ্রে ৯৩টি বুথ রাখা হচ্ছে। আর জেলার ৯টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের ৬৮টি কেন্দ্রের ২০৪টি বুথ এবং দুটি পৌরসভায় ১০টি বুথ করা হচ্ছে। খুলনা জেলা ও নগর মিলিয়ে মোট ৩০৭টি বুথের প্রতিটিতে প্রতিদিন ২০০ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। ৭ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গ্রামপর্যায়ে গণটিকার প্রথম দফায় জেলায় মোট ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪০০ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। গণটিকার কার্যক্রম সফল করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় টিকা পাঠানো শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সব নারী-পুরুষ জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নিজ নিজ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়া নগর, জেলা ও উপজেলার পূর্বনির্ধারিত হাসপাতালে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের যথানিয়মে প্রতিদিন টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলবে। নগর এলাকায় ওয়ার্ড অফিস ছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা কাউন্সিলরের পছন্দমতো জায়গায় কেন্দ্র খোলা হবে

ইউনিয়ন পর্যায়েও পরিষদ ভবন, বিভিন্ন বিদ্যালয় বা জনগণের সুবিধামতো স্থানকে কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হবে। প্রতিটি বুথে দুজন টিকাদানকারী ও তিনজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। আর প্রতি তিনটি বুথে একজন করে সুপারভাইজার থাকবেন। এরই মধ্যে নগরে টিকাদানকারীদের (ভ্যাকসিনেটর) প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। কোনো কোনো উপজেলায় প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে, কোথাও শেষ হওয়ার পর্যায়ের রয়েছে।
টিকার বিষয়ে জনগণকে অবহিত করতে মাইকিং, প্রচারপত্র বিলিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার করা হচ্ছে। বুধবার বিকেলে খুলনা নগরের পূর্ব বানিয়াখামার এলাকায় টিকার বিষয়ে জনগণকে অবহিত করতে মাইকিং করতে দেখা গেছে।

জেলা ইপিআই সুপারিনটেনডেন্ট শেখ আবদুল বাকী প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা পর্যায়ে টিকা পাঠানো শুরু হয়েছে। সবকিছুই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্তমানে খুলনায় প্রায় আড়াই লাখ ডোজ টিকা মজুত আছে। পর্যায়ক্রমে আরও টিকা আসবে।
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রথম ধাপে ১ লাখ ৬৮ হাজার ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পৌঁছায়। পরে ৭ এপ্রিল খুলনায় দ্বিতীয় দফায় আরও ১ লাখ ২৫ হাজার ডোজ টিকা যায়। এরপর আরও তিন ধাপে ১৭ হাজার ৫০ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা যায়। বুধবার দুপুরে এই টিকার আরও ৪৮ হাজার ডোজ পৌঁছেছে।

এদিকে প্রথম তিন দফায় ৮৩ হাজার ২০০ সিনোফার্মের টিকা খুলনায় পৌঁছায়। বুধবার আরও ১২ হাজার ডোজ চীনের এই টিকা পৌঁছায়। আর প্রথম দুই দফায় ৫২ হাজার ৮০০ ডোজ মডার্নার টিকা খুলনায় যায়। বুধবার আরও ৮৭ হাজার ৬০০ ডোজ মডার্নার টিকা খুলনায় পৌঁছেছে।

সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪ হাজার ১৩৬ জন, নারী ৭১ হাজার ৮২১ জন। ওই টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ২৮ হাজার ২৫ জন

কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৩০১ জন পুরুষ ও ৪৯ হাজার ৭২৪ জন নারী। প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

খুলনায় সিনোফার্মের টিকার প্রয়োগ ১৯ জুন থেকে শুরু হয়। এই টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৩০৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩০ হাজার ২৭৮ জন, নারী ২৬ হাজার ৩০ জন। খুলনায় সিনোফার্মের দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩ হাজার ৫০৪ জন।
গত ১৩ জুলাই খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্নার টিকা দেওয়া শুরু হয়। এই টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৫৭৯ জন। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৮১৪ জন পুরুষ ও ২০ হাজার ৭৬৫ জন নারী।

সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকার বিষয়ে অনেকের দুশ্চিন্তা ছিল। সেই দুশ্চিন্তার অবসান হতে যাচ্ছে। ৭ আগস্ট থেকে এই টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে।

Source: Prothomalo