মৃত্যুর বড় কারণ দেরিতে হাসপাতালে আসা

চিকিৎসা-সম্পর্কিত সঠিক নির্দেশিকা বা গাইডলাইন না থাকা, দেরিতে হাসপাতালে আসা ও উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন দেওয়ার জন্য হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার অভাবই করোনার শুরুর দিকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর মূল কারণ। অর্ধেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়া এবং দেরিতে হাসপাতালে যাওয়ার কারণে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের একদল চিকিৎসকের করা ‘ভারবাল অটোপসি অব ডেথস অ্যামং কনফার্মড কোভিড-১৯ কেসেস’ শীর্ষক এক গবেষণায় করোনায় মৃত্যুর কারণ–সম্পর্কিত এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

চিকিৎসকেরা গত বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া তিন জেলার ২২২ জন মৃত রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনার প্রথম ধাক্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা গেলে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হতো। তাঁদের মতে, এখন চিকিৎসা নির্দেশিকা রয়েছে। তবে সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসাসংক্রান্ত অন্যান্য সুবিধা এখনো কম। আবার দেরিতে হাসপাতালে আসার প্রবণতা ও অসচেতনতা এখনো রয়ে গেছে। এসব কারণে মৃত্যু কমছে না।

গবেষণাপত্রটি গত ডিসেম্বরে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রোগীর স্বজনদের বেশির ভাগই বলেছেন তাঁরা রোগীকে নিয়ে দেরিতে হাসপাতালে এসেছেন। বাড়িতে থাকার ফলে অক্সিজেন না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের কাছেও রোগটি নতুন ছিল। তখন চিকিৎসা সরঞ্জামেরও অভাব ছিল।

গবেষণায় দেখা যায়, ১৭৩ জন রোগী (৭৮ শতাংশ) অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানেই তাঁদের মৃত্যু হয়। বাকি ৪৯ জন বাড়িতে মারা যান। বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়ার কারণে প্রায় ১৯ শতাংশ (৪৩ জন) রোগী কোনো অক্সিজেনই পায়নি। আবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৭ শতাংশ (১৬ জন) রোগী অক্সিজেন না পেয়ে মারা গেছেন বলে তাঁরা মনে করছেন। প্রায় ১১ শতাংশ (২৪ জন) রোগী হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সাহায্যে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন পান।

অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ‘হাসপাতালে এখন চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সক্ষমতা বেড়েছে। তারপরও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সব সময় মহামারির আগে ছুটতে হয়। পেছনে ছুটে মহামারিকে ধরা যায় না। আমরা সবাই ভেবেছি প্রথম ঢেউয়ের পর করোনা আর আসবে না। ফলে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘুরেছি। টিকা নিতেও অনীহা দেখা গেছে।’

গবেষণার সুপারিশ অংশে বলা হয়, মহামারির শুরুর দিকে রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে নিশ্চিত নির্দেশিকা ছিল না। চিকিৎসকদের মধ্যে রোগের চিকিৎসা কী হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল।

গবেষণায় অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক রবিউল আলম বলেন, যে সময়ের মৃত রোগীদের নিয়ে এ গবেষণা হয়, তখন চট্টগ্রামে চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব ছিল। এখন সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

চট্টগ্রামে গত বছর করোনার শুরুর দিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী ভর্তি করত না। চট্টগ্রামে জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যা কোভিড-১৯ ওয়ার্ড চালু ছিল। গত বছরের মে-জুন মাসে চট্টগ্রামে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা ছিল মাত্র দুটি। সেপ্টেম্বরের দিকে তা বেড়ে ১০-১৫টি হয়। ১০টি শয্যার কোভিড-১৯ আইসিইউ চালু হয় গত বছরের জুলাই মাসের দিকে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সঞ্চালন ব্যবস্থা চালু হয় আরও পরে।

বর্তমানে চট্টগ্রামে সরকারি–বেসরকারি সব হাসপাতাল মিলে ১৫৭টি আইসিইউ শয্যা ও প্রায় ২০০টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা রয়েছে। রোগী ভর্তি রয়েছেন ১ হাজার ৩০০ জন। তারপরও সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই জুলাই মাসে করোনায় মারা গেছেন ২২৬ জন।

গবেষণার আওতায় আসা মৃত ব্যক্তিদের বেশির ভাগের বয়স ৫০ বছরের বেশি, হার ৬৩ শতাংশ (১৪০ জন)। মৃত ব্যক্তিদের ৭৫ শতাংশ (১৬৬ জন) পুরুষ। তাঁদের ৮১ শতাংশের জ্বর, ৭৫ শতাংশের শ্বাসকষ্ট এবং ৫৫ শতাংশের কাশির লক্ষণ ছিল। ১০৯ জন বা ৪৯ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস ছিল। ৭২ জন রোগীর উচ্চ রক্তচাপ ছিল।
১০৯ জন রোগী অ্যান্টিবায়োটিক এজিথ্রোমাইসিন এবং ১০৫ জন ইনজেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছিলেন। ৩০ শতাংশ বা ৬৭ জন রোগী রক্ত পাতলা করার জন্য ব্যবহৃত হেপারিন–জাতীয় ওষুধ পেয়েছিলেন।

গবেষণায় অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, এ গবেষণা কোভিড বা অন্যান্য মহামারি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করবে।

গবেষণায় আরও অংশ নেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলালুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এনশাদ একরাম উল্লাহ, আবদুল্লাহ আবু সাঈদ, রবিউল আলম ও মির্জা নুরুল করিম, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজাহান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেরিনা আরজুমান্দ, চিকিৎসক মোহাম্মদ আবদুর রহমান চৌধুরী, গালিব বিন মোস্তফা, অর্পি দাশ এবং অরিন্দম সিং।

Source: Prothomalo

editor

Lorem Ipsum is simply dummy text of the printing and typesetting industry. Lorem Ipsum has been the industry's standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen book. It has survived not only five centuries