সৈয়দ মুহাম্মদ বিসমিল্লাহ শাহ (রাহঃ)’র সংপ্তি জীবনী
জগলুল হুদা : রাঙ্গুনিয়া রাহাতিয়া দরবার শরিফের মহান অলিয়ে কামেল নায়েবে সদরুল আফাজিল ফানা ফিল্লাহ বাক্বা বিল্লাহ হাফেজ ক্বারী আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ বিসমিল্লাহ শাহ (রাহঃ)। এই মহান অলিয়ে কামেল সুন্নিয়ত প্রতিষ্ঠায় রেখে গেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তরিক্বতের আনজামের মাধ্যমে বাতিল ফেরকার ফাঁদ থেকে সাধারণ মানুষের ঈমান রার মাধ্যমে রেখে গেছেন অসামান্য অবদান। তাঁর আপাদমস্তক সত্যের কঠোর শৃঙ্খলে ছিল আবদ্ধ।
জন্ম ঃ আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ বিসমিল্লাহ শাহ (রাহঃ) ১৩৪০ হিজরীর ১লা রমজানে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন মরিয়মনগর ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শাইখুল ইসলাম আল্লামা সৈয়দ রাহাতুল্লাহ নক্শবন্দী (রহঃ) এবং মাতা সৈয়দা আমিনা বেগম (রহঃ)।
শৈশব কালঃ তাঁর বাল্যকাল ছিল সাধারণ মানুষের ছেয়ে ভিন্ন। তিনি শৈশব থেকে নির্জনতাকে বেশী পছন্দ করতেন। শৈশবে তিনি মাত্র ছয় মাসে পবিত্র কুরআন শরীফ হেফ্জ করেন। তিনি অতি অল্প সময়ে ইবাদত সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় এবং জিকির আযকারের কৌশল গুলো আয়ত্ব করে নেন।
ছাত্র জীবন ঃ এই মহান ওলিয়ে কামেল তাঁর পিতার নিকটেই প্রাথমিক শিা শুরু করেন। তিনি পিতার প্রতিষ্ঠিত “তাওয়াক্কলীয়া মাদ্রাসায়” কিছুকাল অধ্যায়ন করার পর স্থানীয় মজুমদার খীল হাই স্কুলে ভর্তি হয়ে তথায় অধ্যায়ন কালে এন্ট্রাস পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি পুনরায় পারিবারিক মাদ্রাসায় অধ্যায়ন শুরু করেন। তথায় তিনি বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শি হয়ে উঠেন এবং পিতার সান্নিধ্যে থেকে ১৯৩৭ সনে কৃতিত্বের সহিত ফাজিল পাশ করেন। এর পরে তিনি উচ্চ শিায় কাঙ্খিত হয়ে পিতার অনুমতি সাপেে ভারত বর্ষে গমন করে তথায় পিতার অকৃত্রিম বন্ধু উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা সৈয়দ নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী (রহঃ) এর সান্নিধ্যে থেকে কুরআন, হাদীছ, উছুলে ফিকাহ্, মানতিক সহ বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যায়ন করতঃ পারদর্শিতা লাভ করেন। অল্প দিনেই তিনি একজন ফকিহ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্বীয় উস্তাদ আল্লামা নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী (রহঃ) কর্তৃক দস্তার বন্দী লাভ করেন এবং উস্তাদ হতে বিদায় নিয়ে কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যায়ন করে সার্টিফিকেট লাভ করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে এসে তিনি পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন। এই মাদ্রাসায় তিনি হেফজখানা সংযোজনের মাধ্যমে মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে স্মরণিয় হয়ে রইলেন।
খিলাফত ও বেলায়ত লাভ ঃ শিা জীবন শেষে দেশে পিতার নিকট ফিরে এলে পিতা তাঁকে খিলাফত প্রদান করে তরিক্বতের কাজ পরিচালনার জন্য নিদের্শ প্রদান করেন। খিলাফত প্রদান কালে এক অলৌকিক ঘটনার জন্ম নেয়, হুজুর কেবলার পিতা আল্লামা সৈয়দ রাহাতুল্লাহ নক্শবন্দী (রহঃ) যখন হুজুরকে খিলাফত প্রদান করছিলেন তখন পিতার ফয়েজে এত্তাহাদীর তাওয়াজ্জুহে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এই সময় পাশে উপস্থিত থাকা স্বীয় বড় ভাই শাইখুল হাদিস আল্লমা নুরুচ্ছাফা নঈমী (রহঃ) ছোট ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে দৌড়ে গিয়ে একটি পানি ভর্তি মাটির কলসি এনে মাথায় পানি ঢালতে উদ্যত হলে তাঁর পিতা আল্লামা সৈয়দ রাহাতুল্লাহ নক্শবন্দী (রহঃ) নিষেধ করেন এবং বলেন ‘মাআরিফাত’ এর স্তর সমূহের পরিচিতি শেষে পুনরায় তার জ্ঞান ফিরে আসবে। এই ভাবে তিনি তাঁর পিতার নিকট থেকে খিলাফত ও বেলায়তের অধিকারী হন।
হযরত খাজা গরিবে নেওয়াজ (রহঃ) এর ফয়েজ লাভ ঃ অতপর পিতার নিকট থেকে খেলাফত প্রাপ্তির কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর স্বীয় পিতার নির্দেশে তিনি পুনরায় ভারত বর্ষের মহান আধ্যাত্বিক সম্রাট হযরত খাজা মঈনউদ্দিন আজমীরী (রহঃ) এর পবিত্র রাওজা শরীফে গমন করেন। তথায় তিনি অবস্থান কালে প্রতিদিন হযরত খাজা গরিবে নেওয়াজ (রহঃ) এর রওজা শরীফে গভীর ধ্যানে আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকতেন এবং প্রতিরাতে এক খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন। এছাড়াও তিনি প্রায় সময় গরীবে নেওয়াজ এর ফয়েজ প্রাপ্তির ল্েয গরীবে নেওয়াজ এর তাওয়াজ্জুহ’র আশায় ধ্যান করে থাকতেন। এই ভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর এক রাতে কুরআন তেলাওয়াত কালে তিনি দেখতে পেলেন নুরের আলোয় আলোকিত নুরানী চেহারার এক বুজুর্গ ব্যক্তি (বর্ণনা মতে ঐ ব্যক্তি এর সৌর্ন্দয্য এত বেশী ছিল যে, সব কিছু যেন আলোকৃত হয়ে গিয়েছিল) তাঁর সম্মূখে এসে তাঁকে সম্বোধন করে বললেন- “নতজানু হয়ে বসে থাক” ঐ নুরানী চেহারার সুদর্শন ব্যক্তি তাঁর শিয়রে এসে মাথায় হাত মোবারক খানা বুলাতে থাকেন এবং তাঁকে বাড়ীতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি চলে যান। অতপর তিনি ঐ বুজুর্গ এর নির্দেশ মোতাবেক পরের দিন সকালে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং বাড়িতে ফিরে আসেন।
তরিক্বতের কাজ পরিচালনা ঃ স্বীয় পিতার ইন্তেকালের পর পর পিতার অছিয়ত মোতাবেক তরিক্বতের কাজ শুরু করেন। ঐ সময় তার নিকট থেকে বিভিন্ন অলৌকিক কারামত প্রকাশ হতে থাকে। তাঁর কারামতের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার লোক তাঁর সুশীতল ছায়া তলে শিষ্যত্ব বরণ করেন এবং শরীয়ত ও তরীক্বতের শিা হাছিল করে উভয় জাহানে কামিয়াবী হাছিল করেন।
আধ্যাত্বিক সাধনা ঃ যে সমস্ত মহান অলীগণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি হাছিলে নিজের উপর কঠোর বিধান চালু করেছেন তাদের চেয়ে এই মহান অলিয়ে কামেল এর পন্থা ভিন্ন ছিলনা। তিনি ইলমে দ্বীন হাছিলের পর আরাম আয়েশের জিন্দেগী ত্যাগ করে নিজের শরীরের উপর কঠোর বিধান প্রবর্তন করেছিলেন। তাঁর জীবনের দীর্ঘকাল সময় তিনি প্রতি রাতে নির্ঘুম থেকে এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করার অভ্যাস গড়েছিলেন। জীবনের শেষ দিকে তিনি একদা গভীর রাতে নিজের আস্তানা থেকে আধ্যাত্মিক সাধনার নিমিত্তে দণি রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নস্থ খুরুশিয়ার কালি পাহাড় নামক এক পাহাড়ে পাড়ি জমান। তৎ কালিন ঐ পাহাড় ছিল জন মানবহীন হিংস্র জানোয়ারের বসতি পূর্ণ। এমন একটি জায়গায় তিনি মহান আল্লাহর যিকিরে গভীর ভাবে মগ্ন থাকনে। তাঁর শিষ্যগণের বর্ণনামতে তথায় তাঁকে বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে ঘুরে ভেড়াতে দেখা গিয়েছিল। শুধু তা নয় বিভিন্ন হিংস্র প্রাণী তার কাছে এসে শ্রদ্ধায় মস্তক অবনত করে থাকত। এই ব্যাপারে হুজুরের মুরিদ সুখবিলাস নিবাসী জনাব মুহাম্মদ বখতিয়ার রহমান বর্ণনা করেন যে, হুজুর কালি পাহাড়ে অবস্থান কালে কিছুদিন আমি হুজুরের সঙ্গে ছিলাম, এক রাতে আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়ি। হঠাৎ ভয়ংকর জন্তুর চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি দেখতে পাই যে, হুজুর গভীর ধ্যনে আল্লাহর যিকিরে মগ্ন আর তাঁর খুব কাছা কাছি কিছু ভয়ংকর জন্তু মস্তক অবনত করে আছে, এই অবস্থা দেখে আমি ভয়ে হুজুরের কাছা কাছি হই কিন্তু দেখি ঐ জন্তু গুলো আমাদের কোন রকম তি না করে ফিরে চলে যাচ্ছে। (সুবহানাল্লাহ)। এখনো কালী পাহাড়ে হুজুরের ঐ আস্তানা শরীফ জিয়ারতে হাজার হাজার মানুষ সমাগম হয়ে জিয়ারতের মাধ্যমে মনের মকছুদ পূর্ণ করে ধন্য হয়ে থাকেন।
কতিপয় কারামত ঃ এই মহান অলিয়ে কামেলের ৫৮ বৎসর জীবনই ছিল করামতে পরিপূর্ণ। তাঁর জীবদ্দশায় বহু কারামতের ঘটনাবলি প্রকাশ পেয়েছে, তৎ মধ্যে উল্লেখ যোগ্য দু’একটি কারামত নিচে উল্লেখ করা হল।
হযরত খাজ খিজির (আঃ) এর সাথে সাাৎ ঃ দীর্ঘদিন দণি রাঙ্গুনিয়ার কালি পাহাড়ে অবস্থান শেষে ভক্ত মুরিদানদের সাথে নিয়ে নিজ বাস ভবনে ফেরার পথে কর্ণফুলী নদী পার হওয়ার সময় মাঝ পথে হঠাৎ লাফ দিয়ে নদীতে নেমে যান। উপস্থিত সবায় তাঁর এহেন কান্ডে কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে পড়ে, সবায় বিভিন্ন ভাবে খোজাখুজি শুরু করে উপস্থিত কেউ কেউ হুজুরের বড় ভাই শাইখুল হাদিস আল্লামা নুরুচ্ছাফা নঈমী (রহঃ) কে খবর দিলে তিনি ডুবিরিদের জাল দিয়ে নদীতে নামিয়ে দেন। সবায় প্রায় দু ঘন্টা ধরে খোজাখুজির পর না পেয়ে হতাশ ও চিন্তিত হয়ে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে সবায় হুজুরকে সম্পূর্ন শুষ্ক অবস্থায় ফিরে আসতে দেখে আর্শ্চয হয়ে যান। এই ব্যাপরে হুজুরের কাছে তাঁর কিছু মুরিদান জানতে চাইলে তিনি উত্তরে বলেন যে, আমি হযরত খাজা খিজির (আঃ) এর সাথে সাাৎ করতে গিয়েছিলাম।
পবিত্র কাবা শরীফের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থান ঃ হুজুরের মুরিদ সুখবিলাস নিবাসী জনাব মুহাম্মদ বখতিয়ার রহমান বর্ণনা করেন যে, হুজুর দণি রাঙ্গুনিয়া কালি পাহাড়ে অবস্থান কালে একদিন আমি দেখতে পাই যে, হুজুর পূর্ব দিকে ফিরে নামাজ আদায় করছেন। তখন আমি হুজুর দিক ভূলে গেছেন মনে করে হুজুরকে পশ্চিম দিকে ফিরিয়ে দিয়ে সরে যাই কিন্তু দেখি যে, হুজুর পুনরায় পূর্ব দিকে নামাজ আদায় করছেন তখন আমি আবারও পশ্চিম দিকে ফিরিয়ে দিয়ে সরে গেলে দেখি যে, হুজুর আবারও পূর্ব দিকে ফিরে আছেন। তখন আমি হুজুরকে আর বিরক্ত না করে হুজুরের নামাজ শেষ করার অপোয় থাকি। হুজুর নামাজ শেষ করলে আমি হুজুরের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে হুজুর আমাকে বলেন, হে বখতিয়ার রহমান! কাবা শরীফের পশ্চিম পাশের মুসলমানরা কোন দিকে ফিরে নামাজ আদায় করে? তখন আমি বলে উঠি, হুজুর পূর্ব দিকে। আমার উত্তর শুনে হুজুর আমাকে জানান যে, আমি যখন নামাজ আদায় করছিলাম তখন আমি পবিত্র কাবা শরীফের পশ্চিম পাশে অবস্থান করছিলাম।
গাউসুল আজম হযরত আহমদ উল্ল্যাহ (কঃ) এর রওজা জিয়ারতঃ সরফভাটা নিবাসী হুজুরের পিতার মুরিদ আবদুল জলিল মিয়াজী বর্ণনা করেন যে, একদিন হুজুর আমাকে সাথে নিয়ে গভীর রাতে মাইজ ভান্ডার শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে রওয়ানা দিলেন। আমরা উভয়ে আলাপ চারিতায় অবস্থায় হাট ছিলাম, কিছু সময় পার হওয়ার পর হঠাৎ আমি খেয়াল করলাম আমরা মাইজ ভান্ডার শরীফে অবস্থান করছি। বর্ণনাকারী বলেন আমার মনে হয়েছে আমরা এই মাত্র মরিয়মনগর হুজুরের বাস স্থানে ছিলাম আর এই মাত্র মাইজ ভান্ডার শরীফে চলে আসি। অতপর হুজুর মাইজ ভান্ডার শরীফে গিয়ে সরাসরি হযরত আহমদ উল্ল্যাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এর রওজা শরীফে ঢুকে যান এবং জিয়ারতের জন্য উদ্যত হয়ে গম্ভীর হয়ে গিয়ে জিয়ারত না করে রওজা থেকে বের হয়ে যান। ইতিমধ্যে হযরত গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী (কঃ) এর পুত্র হযরত আবুল বশর মাইজ ভান্ডারী (রহঃ) তাঁর কশফের মাধ্যমে হুজুরের আগমন সর্ম্পকে জানতে পেরে খাদেমদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, মরিয়মনগর থেকে মেহেমান এসেছে খাবার ও বিছানার ব্যবস্থা কর। অতপর খাদেমগন খবরা খবর নিয়ে হুজুর ও আমাকে হযরত আবুল বশর মাইজভান্ডারী (রহঃ) এর নিকট নিয়ে যান এবং সেখানে হুজুর ও আবুল বশর মাইজভান্ডারী (রহঃ) একে অপরের সহিত তাছাউফের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনায় মগ্ন হয়ে পড়েন আর এই ভাবে ফজর হয়ে গেলে আমরা ফজরের নামাজ আদায় শেষে গাউছুল আজম হযরত আহমদ উল্ল্যাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এর রওজা জিয়ারত করে ফিরে আসার সময় আমি হুজুরকে হযরত আহমদ উল্ল্যাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) এর রওজা প্রথমে জিয়ারত না করে বের হয়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান যে, হযরত আহমদ উল্ল্যাহ মাইজভান্ডারী (কঃ) ঐ সময় নিজ রওজায় বিদ্যমান ছিলেন না তিনি বাগদাদ শরীফে ছৈয়দিনা গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) এর সাথে অবস্থান করছিলেন।
স্বপ্নে অপারেশনের মাধ্যমে রোগ থেকে মুক্তি দান ঃ মরিয়মনগর গাউসিয়া কমিটির সম্মানিত সভাপতি জনাব মাওলানা আতাউর রহমান নঈমী বর্ণনা করেন যে, ছোট কাল থেকেই আমার গলাই টনসিল ছিল। ঐ টনসিলের ব্যাথায় খুব বেশী কষ্ট পেতাম। এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমি অনেক ডাক্তারের চিকিৎসা নিই। কিন্তু ডাক্তারের চিকিৎসায় আমি সাময়িক ভাল হয়ে উঠলেও পরে একটু ঠান্ডা লাগলে আবারও আমার ঐ ব্যাথা শুরু হয়ে যেত। এই ভাবে অনেক বছর কষ্ট পাই। অনেক সময় এই ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে আমি কান্না কাটি করতাম। একদিন প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হলে আমি নিরুপায় হয়ে হুজুরের কাছে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া চাইতে যাই এবং হুজুরের কাছে আমার টনসিলের ব্যাথার কথা জানিয়ে দোয়া চেয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। প্রতিদিনের মত ঐ দিন রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়লে আমি স্বপ্নে দেখতে পাই যে, হুজুর আমাদের বাড়িতে এসে আমার মাথার পাশে দাড়িয়ে আছেন, আর আমাকে বলেন যে, তোমার মুখটা খোল আমি মুখ খোলে হা করি তখন হুজুর উনার ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলটি আমার মুখে ঢুখিয়ে দিয়ে টনসিলের গুটিতে একটা ধাক্কা দিয়ে টনসিলের গুটিটা নিয়ে ফেলেন। আর এতে আমার মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে লাগল তখন ভয়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি দেখতে পাই যে, সত্যি সত্যি আমার গলায় টনসিলের যে গুটি ছিল সেইটি আর নেই। শুধু তা নয় ঐ দিনের পর থেকে আমার যতই ঠান্ডা লাগুক না কেন কখনো টনসিলের ব্যাথা দেখা দেয়নি।
ইন্তেকালের পর বাঘের পিঠে সওয়ার অবস্থায় দর্শন প্রদান ঃ হুজুরের বড় পুত্র পীরজাদা সৈয়দ ফতহুল কদির নঈমী (মাঃ জিঃ আঃ) এর মেঝ পুত্র শাহাজাদা মওলানা সৈয়দ মোস্তফা কাউছার রাহাতী নঈমী বর্ণনা করেন যে, একদিন তিনি দণি রাঙ্গুনিয়ায় খুরুশিয়ার কালি পাহাড়ে হুজুরের আস্তানা শরীফে গমন করেন। সেখানে হুজুরের অনেক ভক্ত অনুরক্তদের সাথে সাাৎ কালে এক বৃদ্ধা মহিলা তাকে বলেন হুজুর আমি একটি ঘটনার কথা বলার জন্য অনেক দিন ধরে হুজুরের আওলাদের কারো দেখা পাওয়ার আশায় ছিলাম। তখন শাহাজাদা মোস্তফা কাউছার রাহাতী নঈমী ঐ বৃদ্ধা মহিলাকে বললেন, কি ঘটনা বলেন। ঐ বৃদ্ধা তখন তাকে জানান, আমি পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা ও রোগ সূখে বহুদিন ধরে কষ্ট পাচ্ছিলাম। তাই এই সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় প্রায় প্রতিদিনই হুজুরের আস্তানা শরীফ জিয়ারত করি। তবুও কেন যেন আমার ঐ কষ্টের দিন শেষ হচ্ছিল না। তাই একদিন হুজুরের আস্তানা শরীফ জিয়ারত শেষে পাহাড়ের নিচে বিষন্ন মনে বসে পড়ি আর মনে মনে ভাবতে থাকি, হযরত বিছমিল্লাহ শাহ (রহঃ) সম্ভবত এই আস্তানায় আর আসেন না। যদি আসেন তবে আমার দুঃখের শেষ কেন হচ্ছে না। এই বলে বলে আমি কাঁদছিলাম, হঠাৎ আমি দেখতে পাই যে, পশ্চিম দিক থেকে বাঘের পিঠে সওয়ার হয়ে কে যেন আসছে। আমি ভাল করে দেখার চেষ্টা করি। কিছু সময় পর ঐ সওয়ারী আমার নিকটবর্তী হলে আমি দেখি যে, হুজুর বিছমিল্লাহ শাহ (রহঃ) আমার দিকে থাকিয়ে মুসকি হাসছেন এই অবস্থা দেখে আমার শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়। আমি সাথে সাথে জোরে হেটে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্ট করি। কিছু দূর গিয়ে দাড়িয়ে পেছন ফিরে থাকিয়ে দেখি তিনি আর নেই কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
নিজ ইন্তেকালের অগ্রিম খবর ঃ হুজুরের মুরিদ সুখবিলাস নিবাসী জনাব মুহাম্মদ বখতিয়ার রহমান বর্ণনা করেন যে, হুজুরের ইন্তেকালের দিন তিনি নিজ বাস ভবনের আঙ্গিনায় চেয়ারে বসা অবস্থায় আমি উনার সাথে সাাৎ করতে যাই এবং কিছুণ অবস্থান করে বিদায়ের অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি আমাকে বলেন “বখতিয়ার রহমান! এখন না গিয়ে আমার দাফন শেষ করে যাও” তখন আমি হুজুরের ঐ কথায় তেমন মনযোগ না দিয়ে পুনরায় অনুমতি চেয়ে বাড়ি উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাই। কেননা ঐ সময় হুজুর সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। পথিমধ্যে আমি হুজুরের ইন্তেকালের খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় এবং তাড়তাড়ি ফিরে এসে দেখি হুজুর ইন্তেকাল করেছেন।
ইন্তেকাল ঃ এই মহান অলিয়ে কামেল ১৯৭৬ খ্রিঃ ২৪শে ফেব্রুয়ারী ১১ই ফালগুন, ১৩৯৫ হিজরী সনের ২৪শে সফর রোজ মঙ্গলবার বড় ভাই শাইখুল হাদিস আল্লামা নুরুচ্ছাফা নঈমী (রহঃ) সহ সকলের উপস্থিতিতে অসংখ্য মুরীদান ও ভক্ত অনুরক্তদের শোখ সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে কালামা পাঠান্তে ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালে চর্তুদিকে এক শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর কলব থেকে আল্লাহু আল্লাহু ধ্বনি শুনতে পেয়ে হুজুরের বড় ভাই আল্লামা নুরুচ্ছাফা নঈমী (রহঃ) বলে উঠেন আমার ভাই মাআরিফতের এমন এক মকামে পৌছে গেছেন যেখানে পৌছতে আমার আরও পঞ্চাশ বছর ইবাদত করতে হবে। তথ্যসুত্র : আনজুমানে রাহাতিয়া বিসমিল্লাহ শাহ, রাহাতিয়া দরবার শরীফ।