নাটোরে নিন্মমানের উপকরণে খাদ্যগুদাম নির্মাণকাজ বন্ধ করলেন মন্ত্রী-সাংসদ
নাটোর প্রতিনিধি : সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে সরকারী খাদ্যগুদাম। নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে এসে দেখা গেল কাজ ত্রুটিপূর্ণ। মুহূর্তের মধ্যে নির্মাণ কাজের এ গাফিলতির খবর পৌছে গেল খাদ্যমন্ত্রীর কাছে। অতঃপর চলমান কাজ বন্ধ করে পুনরায় নির্মাণকাজের নির্দেশনা দিলেন খোদ মন্ত্রী।
বৃহষ্পতিবার সকালে নাটোর সদর উপজেলার বড়গাছা এলাকায় ১ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষতাসম্পন্ন খাদ্য গুদামের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে আসেন নাটোর-২ আসেনর সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল। উদ্বোধন শেষে নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে গিয়ে সাংসদ দেখেন, ভবনের মজবুত ভিত্তির জন্য ৩ ইঞ্চি সিসি ঢালাই প্রয়োজন হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢালাই দিয়েছে ১ইঞ্চি। এছাড়া নির্মাণকাজে ব্যবহৃত রড, সিমেন্ট ও বালু নি¤œমানের। সাংসদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্থানীয় জনগণ এগিয়ে এসে একই অভিযোগ করেন। হাতেনাতে ত্রুটিপূর্ণ কাজের প্রমাণ পেয়ে সাংসদ শিমুল তাৎক্ষণিকভাবে নির্মাণ কাজ স্থগিত করেন। নির্মাণ কাজ তদারকির কাজে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্থপতি কনসাল্টেন্সির প্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মান্নান মিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ কাজের বিষয়টি গোপন রাখার জন্য ভৎসনা করেন তিনি। এসময় তাৎক্ষণিকভাবে মুঠোফোনে বিষয়টি খাদ্যমন্ত্রী এড. কামরুল ইসলামকে অবহিত করেন সাংসদ শিমুল। সবকিছু শুনে মন্ত্রী ত্রুটিপূর্ণ কাজ স্থগিত করে পুনরায় সঠিকভাবে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ অভিযোগ করেন, ভবনের নির্মাণ কাজ নি¤œমানের বলে লোকমুখে শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন থেকে। সংশ্লিষ্ট কর্তাদের জানানোর পরও তারা কর্ণপাত করেনি। এত বড় একটি প্রকল্পের কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এমন উদাসীনতা মেনে নেয়া যায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্মাণ কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক জানান, নির্মাণ কাজ শুরু হবার পর থেকে কোন মিকচার মেশিনের আওয়াজ শুনতে পায়নি কেউ। আসলে তাদের কোন মিকচার মেশিনই নেই। এছাড়া কাজে ব্যবহৃত পাথরও ভবন নির্মাণের জন্য উপযোগী নয়।
এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লিটন ব্রাদার্সের সত্বাধিকারী মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলে তিনি কোন সাড়া দেননি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্থপতি কনসাল্টেন্সির প্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মান্নান মিয়া প্রথমে দাবী করেন, কোন উপকরণই নি¤œমানের নয়। তাছাড়া ব্যবহৃত রডও ঢাকা থেকে টেস্ট করে আনা হয়েছে। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে ঢালই কাজের ত্রুটি ধরা পরলে মান্নান মিয়া ত্রুটিপূর্ণ কাজের কথা স্বীকার করে জানান, তিনি কাজ শুরুর সময় ছিলেন না বলেই এমন নি¤œমানের কাজের সুযোগ পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ত্রুটিপূর্ণ সকল কাজ বাতিল করে নতুন করে করার তাগিদ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো কাজটি এখন থেকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সেই সাথে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আকতার বানু বলেন, কাজটি যে ত্রুটিপূর্ণ, তা প্রমাণিত হয়েছে। সরকারী স্থাপনা নির্মাণে কোন ধরণের অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহারের বিষয়টি দেখার পর আমি খাদ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তিনি ভালো উপকরণ দিয়ে নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু ও সম্পন্ন নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারী স্থাপনা নির্মাণে কোনরকম গাফিলতি সহ্য করা হবে না। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি সুষ্ঠুভাবে নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ই ডিসেম্বর থেকে গুদামটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।