জমির বিরোধ নিয়ে সালিসে শিশুকে পিটিয়ে হত্যা
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুরে জমি নিয়ে সালিসের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের মারধরে ফাতিহা নামের দুই বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নিহত ফাতিহার বাবা আ. ছাত্তার (৩০), মা কুসুম (২০) ও দাদা লিয়াকত আলী (৫০)। এ সময় আ. ছাত্তারের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামে স্থানীয় দুই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যের সামনে এ হালার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, সালিসের এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় প্রতিপক্ষ লালমিয়ার লোকজন দা ও লাঠি নিয়ে লিয়াকত আলীর ছেলে আ. ছাত্তারের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা আ. ছাত্তার, ছাত্তারের স্ত্রী কুসুম, দুই বছরের মেয়ে ফাতিহা, ছাত্তারের বাবা লিয়াকত আলীকে মারধর করেন। এতে তারা গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফাতিহাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- হয়দেবপুর গ্রামের আ. রহমানের ছেলে লালমিয়া, আশকর মৃধার ছেলে ফালু মৃধা, মাহাম্মদ আলীর ছেলে লোকমান, শুক্কুর আলীর ছেলে নজরুল হক, আসকর মৃধার ছেলে খোকন মৃধা, আ. রশিদের ছেলে ফরহাদ, আ. রহমানের ছেলে আ. রশিদ, খোরশিদ, ইসলামের ছেলে হুমায়ুন, মোরশিদের ছেলে আকাশ, জাকিরসহ অজ্ঞাত ১৫ থেকে ২০ জন।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আ. ছামাদ বলেন, দুপুরে লিয়াকত আলী ও লালমিয়ার জমি সংক্রান্ত বিরোধ বিষয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. মমিন ও পার্শ্ববর্তী গফরগাঁও উপজেলার ওরাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য লিয়াকত আলী, হয়দেবপুর গ্রামের ফালু মৃধা, লোকমান, নজরুল হক, খোকন মৃধার নেতৃত্বে সালিস বৈঠক বসে। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় হামলাকারীরা ছাত্তারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। এ ঘটনায় আহতদের শ্রীপুর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক শিশু ফাতিহাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত শিশুর দাদা লিয়াকত আলী জানান, প্রতিবেশী আ. রহমানের ছেলে লালমিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের বহু পূর্ব থেকে তিন একর জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে আদালতে একটি রেকর্ড সংশোধনের মামলা বিচারাধীন আছে। এর পরেও লালমিয়া তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছেন। সম্প্রতি লালমিয়া শ্রীপুর থানায় তারেদর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দেন। এছাড়া কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদেও অভিযোগ দেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় হয়দেবপুর গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের অভিযোগ নিয়ে সালিস ডাকেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আ. ছামাদ।
তিনি বলেন, ‘সালিস চলাকালে লালমিয়ার লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালান। প্রাণে বাঁচতে আমরা দৌড়ে ছাত্তারের বাড়িতে আশ্রয় নেই। এ সময় হামলাকারীরা বাড়িতে হামলা করে আমিসহ আমার ছেলে আ. ছাত্তার, ছেলে বউ কুসুম ও দুই বছরের নাতনি ফাতিহাকে পিটিয়ে আহত করে। হামলাকারীরা আমার ছেলের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে, পরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক আমার নাতি ফাতিহাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
ফাতিহার বাবা আ. ছাত্তর বলেন, ‘তারা আমাদের হামলা করলে, আমরা দৌড়ে বাড়িতে আশ্রয় নেই। ফালুর হুকুমে হামলাকারীরা বাড়িতে হামলা চালান। আমার স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করেন। আমার স্ত্রীর কোলে থাকা দুই বছরের শিশু ফাতিহাকে পিটিয়ে হত্যা করে।’
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিজুল বলেন, একটি জমি সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে জানতে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মমিন ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আ. ছামাদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা সরেজমিনে দু’পক্ষের জমির কাগজ পর্যালোচনার এক পর্যায়ে মারপিটের ঘটনা ঘটে।