সামাজিক দূরত্ব মেনে বিয়ে-থাওয়া

বিয়ে জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়। আর শীত যেন বিয়ের মৌসুম। তাই শীত এলেই দেশে বিয়ের ধুম পড়ে যায়। তবে এ বছর করোনা মহামারী দেখা দেয়ায় অনেকে যেমন বিয়ে পিছিয়েছেন, তেমনি করোনার দীর্ঘ অবসরের সুযোগে অনেকেই বিয়েটা সেরে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। করোনার কারণে জীবন তো আর থেমে থাকবে না। করোনাকে সঙ্গী করেই আমাদের জীবন চালিয়ে নিতে হবে।

বিশ্বে করোনা সংক্রমণের প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। বরং শীতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এবং আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। করোনার সংক্রমণের শুরুতে জনসমাগম এড়াতে বড় বড় অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছিল। তবে লকডাউন শিথিল হওয়ার পরে ধীরে ধীরে জনজীবন অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এখন স্বল্প পরিসরে সব ধরনের অনুষ্ঠানেরই আয়োজন করা হচ্ছে।

বিয়ে তো আর একদিনের উৎসব নয়। পানচিনি, হলুদ সন্ধ্যা, বিয়ে ও বৌভাত আর না হলেও তো চারটা অনুষ্ঠান হয়-ই। এসব অনুষ্ঠানই এখন ঘরোয়াভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। ৫০ জনের বেশি অতিথি সমাগম যাতে না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সবার আগে ভাবা উচিত। স্বল্প পরিসরে এ বিয়ের আয়োজনে আত্মীয়স্বজনদের ভিডিওকলের মাধ্যমে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেন। বিয়ে পড়ানোর সময় জুম, ফেসবুক আর মেসেঞ্জারে আÍীয়দের যুক্ত করতে পারেন। পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুরা সব থেকে বেশি ঝুঁকির মাঝে আছেন। তাই বাড়িতে আয়োজন করলেও এদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে।

করোনার এ সময় দলবেঁধে ঘুরে ঘুরে বিয়ের কেনাকাটা না করে বরং সতর্কতা মেনে অনলাইনে অধিকাংশ কেনাকাটা সেরে ফেলতে পারেন। হলুদের সরঞ্জাম থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার- সবই এখন অনলাইনে কেনা যাচ্ছে। তারপরও কেউ যদি কেনাকাটা করতে শপিংমলে যেতে চান, তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। বাড়িতেই আয়োজন করুন আর কনভেনশন সেন্টারে ভেন্যুতে- যেন একটি চেয়ার থেকে আরেকটি চেয়ারের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব বজায় থাকে, সে বিষয়ে নজর দিন। আকদ, হলুদ বা বিয়ের আয়োজনে প্রতিটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করুন, যথেষ্ট পরিমাণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, খাবারের টেবিলে প্লেট-গ্লাসসহ আনুষঙ্গিক সব জিনিস অত্যাধুনিক প্লাস্টিক পেপার দিয়ে র‌্যাপিং করার ব্যবস্থা করতে পারেন। অতিথি, আয়োজক এবং বর-কনেসহ প্রত্যেকের মুখেই যেন মাস্ক থাকে। মহামারীর এ সময়ে অতিথি বরণ করার সময় ট্রেতে মিষ্টির পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন।

বিয়ে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় একটি অধ্যায়ের সূচনা। তাই প্রত্যেকেই চায়, তার বিয়ের সাজপোশাক হোক সবচেয়ে নজরকাড়া; তা ঘরোয়া হোক আর বিশাল পরিসরে। ঘরে সাজা সম্ভব না হলে যে পার্লার ও মেকওভার প্রতিষ্ঠানগুলো এখন যথেষ্ট সতর্কতা মেনে স্টাফরা পিপিই ও মাস্ক পরে এবং পার্লারে প্রবেশের সময় শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে বর-কনে সাজাচ্ছেন, সেসব পার্লারগুলোয় সাজতে চেষ্টা করুন। এখন অনেক পার্লার থেকে বিউটিশিয়ানরা বাড়িতে এসে নিজস্ব প্রসাধনী দিয়েই সাজিয়ে দিচ্ছেন। সম্ভব হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাজতে পারেন।

বিয়ের দিন ট্রেডিশনাল সাজপোশাক বেছে নিলে রিসিপশনে ট্রেন্ডি সাজপোশাকে বৈচিত্র্য আসবে। সেক্ষেত্রে বিয়ের দিন শাড়ি পরলে রিসিপশনে গাউন, সারারা, লেহেঙ্গা ও ঘাগড়ার মতো ট্রেন্ডি কিংবা ফিউশন পোশাক পরতে পারেন। রঙের ক্ষেত্রে লাল বা মেরুনের মতো উজ্জ্বল রং থেকে বেরিয়ে এদিন বেছে নিতে পারেন- সোনালি, সফট পিঙ্ক, অ্যাশ, হালকা সবুজ ও চাপা সাদার মতো সফট রং। এখন অনেক ফ্যাশনহাউস বিয়ের পোশাক বা অনুষ্ঠানের পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং ফ্যাশনেবল মাস্ক তৈরি করছে। বিয়ের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে এ ধরনের মাস্ক পরে সাজসজ্জা করুন করোনাকালীন বিয়েতে।

Source:Daily Prothom Alo

 

%d bloggers like this: