আত্রাইয়ে গোয়ালঘরে পরিণত সেই বিদ্যালয়টি আবারও পাঠশালায় পরিণত

রুহুল আমিন, আত্রাই (নওগাঁ) সংবাদদাতা : নওগাঁর আত্রাই উপজেলার গোয়ালঘরে পরিণত সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবশেষে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় এখন মুখরিত বিদ্যালয় অঙ্গন। স্থানীয় সংবাদকর্মীদের তৎপরতা, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আন্তরিকতা ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি এখন আর গোয়ালঘর নেই। পাঠশালায় পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী গ্রাম তেজনন্দী। এ গ্রামে ছিল না কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেই মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নেই কোন মাদ্রাসা। অথচ প্রায় সাড়ে হাজার লোকের বসবাস নিয়ে এ গ্রামের ২ শতাধিক শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য যেতে হয় নদী পার হয়ে বৈঠাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। বর্ষাকালে ভরা নদীতে নৌকা পারাপারে এসব শিশুদের নিয়ে উৎকন্ঠায় থকতে হয় অভিবাবকদের। গ্রামের শিশুদের শিক্ষা অর্জন নিশ্চিত করতে গ্রামের কিছু শিক্ষানুরাগীদের প্রচেষ্টায় ১৯৯০ সালে ওই গ্রামে গড়ে তোলা হয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কালের আবর্তে নিভে যায় সে প্রচেষ্টা, প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে উড়ে নিয়ে যায় বিদ্যালয়ের বেড়া ও টিনসেডের ঘর। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ে শিক্ষার আলো ছড়ানো স্বপ্ন।
এদিকে বর্তমান সরকার ২০১২ সালে যেসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই ওইসব এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপনের একটি প্রজেক্ট গ্রহন করে। সে অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৫০০টি বিদ্যালয় স্থাপনের চুরান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে স্থানীয় সাংসদ ইসরাফিল আলমের প্রচেষ্টায় তেজনন্দীতেও ওই প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালে প্রায় ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে তেজনন্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি দৃশ্যমান ভবন তৈরী করা হয়। এদিকে ভবন তৈরি হলেও সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় বিদ্যালয়টি চালু রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে দিনে দিনে এটি নামে বিদ্যালয় থাকলেও পরিণত হয় গোয়ালঘরে। এটি স্থানীয় লোকজনদের গরু ছাগল, খড়কুটা, বিভিন্ন জ¦ালানী সামগ্রী রাখার স্থানে পরিণত হয়। বিষয়টি অবগত হয়ে স্থানীয় সংবাদিকরা ছুটে যান সেখানে। ছবিসহ গত ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বিভিন্ন দৈনিকে “ আত্রাইয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন গোয়ালঘরে পরিণত” শিরোনামে সংবাদ প্রাকশিত হয়। এ সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে আগষ্ট মাসের ১০ তারিখে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন। ওই সময় থেকেই আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোখলেছুর রহমান বিদ্যালয়টি পুনঃচালুর উদ্যোগ গ্রহন করেন। তারই ফলশ্রুতিতে উপজেলা শিক্ষা অধিদফতর থেকে সেখানে ৩জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে শিক্ষার্থী দিয়ে শুরু করা হয় নতুন আঙ্গিকে পাঠদান কার্যক্রম। ফলে আবারও ফিরে পায় বিদ্যালয়টি নতুন প্রাণ, শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয় বিদ্যালয় প্রাঙ্গন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে নিয়োজিত জহুরুল ইসলাম দুলাল বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অভিভাবকরা শিক্ষার্থী দিতে অনেকটা ভয় পাচ্ছে। তারপরও প্রাক-প্রাথমিক ১ম এবং ২য় শ্রেনী আমরা চালু করেছি। এ তিন শ্রেনীতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে। আমরা আশাবাদি আগামী বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষার্থী পাবো এবং ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত চালু করতে পারবো। উপজেলা শিক্ষা অফিসার রোখসানা আনিছা বলেন, আমরা চাই কোন এলাকার শিশু যেন শিক্ষা আলো থেকে বঞ্চিত না থাকে। সরকারের সবার জন্য শিক্ষা এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। তেজনন্দীতে কিছু জটিলতার কারনে বিদ্যালয়টি বন্ধ ছিল। আবারও চালু করা হলো আশা করি আর বন্ধ হবে না। আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোখলেছুর রহমান বলেন, সরকার যেখানে শিক্ষার আলো বিস্তারে অর্ধকোটির উপরে টাকা ব্যয় করে ভবন নির্মাণ করেছে। আর সেই ভবন গোয়ালঘর হবে এটা হতেই পারে না। সাংবাদিকদের সহযোগিতায় বিষয়টি আমরা আমলে নিয়ে পুনঃ উদ্যোমে চালু করলাম। এলাকাবাসী এখন থেকেই এর সুফল পাবে।

দৈনিক আমার বাংলাদেশ

দৈনিক আমার বাংলাদেশ