বিএনপি ভাঙবে না নির্বাচনেও যাবে : মাহমুদুর রহমান মান্না
নিউজ ডেস্ক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর সরকারের বিজয় হয়নি বলে মনে করছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। খালেদা জিয়ার সাজা-পরবর্তী রাজনীতি নিয়ে সমকালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, সরকার মনে করলেও তারা বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। সেই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে দণ্ড দিয়েও বিএনপিকে ভাঙা যাবে না বলে মনে হচ্ছে। খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাননি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ওই রায়ের পর মানুষ সন্তুষ্ট হয়নি। বিচার যথার্থ হয়েছে বলে মানুষ মনে করে না। অবশ্য এই বিচার প্রক্রিয়া সবে শুরু হয়েছে। তাই চূড়ান্ত কথা বলার সময় এখনও আসেনি। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। এর মানে, মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে।
খালেদা জিয়াকে আইনি সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রায়ের পর কারাভ্যন্তরে খালেদা জিয়ার অবস্থান, ডিভিশন পাওয়া-না পাওয়া এবং রায়ের কপি দিতে বিলম্ব হওয়ায় মানুষের মধ্যে সংশয়-সন্দেহ দেখা দিয়েছে। খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় হওয়ার পর বিএনপি সারাদেশেই আবার মাঠে নেমেছে। পুলিশও মারমুখী অবস্থান থেকে সরে গেছে। এমন পরিবর্তন বেশ লক্ষণীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে দুই দফায় দায়িত্বে থাকা এই সাবেক ভিপি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তার নিরসন না হওয়ায় আগামী নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মানুষ একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। অতি সম্প্রতি সরকারি দলেও প্রশ্ন উঠেছে- সেই রকম নির্বাচন হবে কি? আসলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তখনই হবে, যখন পালাক্রমে অদল-বদল করে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনে আসবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, সরকারি দল বলছে- খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি শুধুই একটি দুর্নীতির মামলা। এর মধ্যে রাজনীতি নেই; কিন্তু মানুষ তা বিশ্বাস করছে না। মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে, তার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি লুটপাটের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সরকার হয়তো আশা করেছিল, খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার পর তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়বে বিএনপি। তারা সহিংস ও সন্ত্রাসী প্রতিবাদে নামবে। সেটাকে কেন্দ্র করে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপরে এমন দমন-পীড়ন চালাবে, যাতে তারা নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হবে। কয়েক বছর ধরে সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মামলার রায়ের পর আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল রাখার মধ্য দিয়ে বিএনপি এর জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে বিএনপি আপাতত সাফল্যও পেয়েছে। তাদের আন্দোলনের কৌশলে মানুষ খুশি হয়েছে। এমন অবস্থায় আন্দোলনের পাশাপাশি বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা এবং তাদের পক্ষে ভোট দিয়ে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের দণ্ড নিয়ে কারাবরণ করার সময় নেতাকর্মীদের শান্ত ও সুশৃঙ্খল থাকতে বলেছেন; অহিংস আন্দোলনের নির্দেশ দিয়েছেন; নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন। এমন বক্তব্যে এটা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়- খালেদা জিয়া জেলে থাকলেও বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। সরকার জানে, বিএনপির অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সরকারি দলের জয়লাভের সম্ভাবনা কম। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটাররা বুকে নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ধানের শীষে ভোট দিয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে যদি সেই রকম হয়, তাহলে সরকারি দলের পাশা উল্টে যাবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব দলের দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে যেভাবে দল ও আন্দোলন পরিচালনা করছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। এই নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ থাকলে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেও বিএনপি আগামী নির্বাচনে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়াতে পারবে।